এন্টিবায়োটিক সেবনের আগে ভাবুন দ্বিতীয়বার
এন্টিবায়োটিক বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে একটি। মেয়ো ক্লিনিকের করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ আমেরিকানই কমপক্ষে একটি ফার্মাসিউটিক্যালের উপর নির্ভরশীল। আর ঔষধের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এন্টিবায়োটিক। উন্নতদেশের মতো বাংলাদেশের অবস্থাও একই রকম। তার উপর আছে ভেজাল ঔষধের বিপদ।
এন্টিবায়োটিক নির্ভরশীলতার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হল, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি কিংবা কম গ্রহণ করলে তা ক্ষতিকর ব্যক্টেরিয়াগুলোকে ঔষধ প্রতিরোধী করে তোলে। জীবাণুর ক্ষতি করার শক্তি আরো অনেকগুণ বেড়ে যায়। ক্রমাগত এন্টিবায়োটিক গ্রহণে দেহাভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে সাধারণ ওষুধ আর কাজ করে না। এন্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো রয়েছেই। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(ডব্লিউএইচও) একে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকট বলে আখ্যা দিয়েছে। ‘সেন্টার ফর ডিজিজ ও প্রিভেনশন’ এর মতে, এন্টিবায়োটিকের যুগ শেষ হওয়া আবশ্যক।
সন্দেহ নাই, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যাকে সফলতর করে তুলেছে এন্টিবায়োটিক। কিন্তু সময় এসেছে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প খুঁজে নেবার। এন্টিবায়োটিককে বিদায় জানাবার ৮টি কারণ তুলে ধরা হল:
১. আইবিডি (ইনফ্ল্যামেটরি বাউয়েল ডিজিজ বা পেটের প্রদাহ)
ফক্স নিউজে ২০১১ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ অনুযায়ী, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার পরোক্ষভাবে মলাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসার সময় ক্লোসট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়াম এক ধরণের বিষ নিঃসরণ ঘটায়। এতে মলাশয়ের প্রদাহ ঘটে। যদিও অন্ত্রের অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিকের কারণে মারা যায়, কিন্তু ক্লোসট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়া মারা যায় না। বরং ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে ও বিষ নিঃসরণ করে যা অন্ত্রের প্রাচীরে ঘা সৃষ্টি করে।
প্রকৃতপক্ষে ক্রন ডিজিজ নামক যে রোগটি গত ৫০ বছরে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তা ঘটেছে মূলত এন্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে। এমনকি দুই জার্মান বিজ্ঞানী এ নিয়ে একটি তত্ত্বও দিয়েছেন। তারা বলছেন, পাকস্থলির উপকারী ব্যকটেরিয়াগুলো এন্টিবায়োটিকের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে এই রোগটি তৈরী করে।
২. যকৃতের ক্ষতিসাধন
অধিকাংশই ক্ষেত্রেই লিভার ফেইলিউরের দায় পড়ে রোগ নিরাময়ের ঔষধের ওপর! যার সর্বশেষ পরিণতি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট অথবা মৃত্যু। গ্যাস্ট্রোএনটারোলজি জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণায় জানা যায়, যদিও প্রেসক্রাইব করা সবধরনের ঔষধই যকৃতের ক্ষতিসাধনের সাথে সম্পর্কিত, তবে তাদের মধ্যে এন্টিবায়োটিকই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঔষধের মধ্যেও নানান শ্রেণী বিভাজন রয়েছে। তাদের মধ্যে এন্টিবায়োটিক যকৃতের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক।
৩. ক্যান্সারের সংযোগ
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এন্টিবায়োটিক খুব কম সেবন করেন তাদের তুলনায় যারা দিনে ছয়টি বা ততোধিক এন্টিবায়োটিক সেবন করেছেন তাদের সাধারণ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি দেড়গুণ বেশি।
গবেষণায় বলা হয়, সামান্য এন্টিবায়োটিক গ্রহণও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য পরিচিত রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে মেদবৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও অ্যালকোহল। গবেষকরা দেখেছেন- যারা পেনিসিলিন, কুইনাইন, মেট্রোনাইডেজোল ইত্যাদি এন্টিবায়োটিক সেবন করেন তাদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৮-১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যান্সার-এ প্রকাশ পাওয়া একটি গবেষণা অনুযায়ী, যারা ২-৫টি এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন নিয়েছেন তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। যাদের ৬টি কিংবা ততোধিক এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন রয়েছে তাদের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ।
৪. এইডস্
অনেকেই এন্টিবায়োটিকের সঙ্গে এইডসের সম্পর্ক শুনে চমকে উঠবেন। তবে এটি বিস্ময়ের কোন ব্যাপার নয়। আমেরিকায় এইডস আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তিই পূর্বে অত্যাধিক এন্টিবায়োটিক সেবন করতেন। মূলতঃ এন্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে এইডস আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫. ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম
এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সাথে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমসহ(সিএফএস) ভাইরাসজনিত টানা অসুস্থতা জড়িত।
বিখ্যাত এমই বা সিএফএস গবেষক কেনি ডি মেয়ারলেয়ার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ও তার বেলজিয়ান গবেষক দল এমই বা সিএফএস এর একটি প্রধান কারণ উন্মোচন করেছেন। তার মতে, এমই বা সিএফএস হওয়ার প্রধান কারণ শরীরে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এন্টিবায়োটিক ব্যবহার, স্যালমোনেলার সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৬. ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা
এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার শরীরে এন্ডোটক্সিন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় নিয়োজিত কোষগুলোর মধ্যকার যোগাযোগ পদ্ধতি ধ্বংস করে দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় নিয়োজিত কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে, দেহে প্রবেশ করা রোগ জীবাণুগুলো কোন রকম প্রতিরোধের মুখেই পড়ে না। অন্ত্রের উপকারী ব্যকটেরিয়াগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোর সাথে সমন্বয় রেখেই কাজ করে। কিন্তু এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারে রোগপ্রতিরোধে নিয়োজিত কোষগুলোর ক্ষতি সারাতে পারে না।
৭. রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলা
লেখক ও ন্যাচারোপ্যাথিক ফিজিশিয়ান পিটার জে. ডি’আডামো মানবদেহের রক্তের গ্রুপ, জীবনধারণ, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের মধ্যকার আন্তঃসংযোগ নিয়ে গবেষণার জন্য পরিচিত। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘যখন আপনি আপনার দেহকে কোন এন্টিবায়োটিক ছাড়াই নিজের মত যুদ্ধ করতে দেবেন, তখন এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দিষ্ট এন্টিবডির কার্যকারিতা আবিষ্কারে পটু হয়ে উঠে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সংক্রমণ প্রতিরোধেও আপনার শরীরের ক্ষমতা বেড়ে যাবে অনেকগুণ’।
এন্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধে কার্যকর কোষগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। তাই দেহাভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ কোষগুলোকে আগে কাজ করতে দিন। তাদের শত্রু চিনতে দিন। পরবর্তীতে তারা নিজেরাই এগুলোকে প্রতিরোধ করবে।
৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্ষতিসাধন
মানুষের কোষের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে মাইটোকন্ড্রিয়া। এর ক্ষতির একটি প্রধান কারণ এক্টামিনোফেন, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদির মত ঔষধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার।
তাই এন্টিবায়োটিক সেবনের বিকল্প খুঁজুন।
একজন দক্ষ হোমিও্প্যথের সাথে পরামর্শ করুন। একান্তই প্রয়োজন না হলে এন্টিবায়োটিক সেবন পরিহার করুন। শরীরকে সুস্থ রাখুন।
একজন দক্ষ হোমিও্প্যথের সাথে পরামর্শ করুন। একান্তই প্রয়োজন না হলে এন্টিবায়োটিক সেবন পরিহার করুন। শরীরকে সুস্থ রাখুন।
No comments