Header Ads

সিজার অথবা স্বাভাবিক জন্মদান,বিজ্ঞান কি বলে?

রোমান সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম সিজারিয়ান ডেলিভারী সম্পন্ন হয়।কোন গর্ভবতী মা মারা গেলে তার পেট কেটে বাচ্চা বের করা হত।ইতিহাস থেকে জানা যায়,প্রায় ৪ শত বছর আগে এই পদ্ধতি প্রথম প্রয়োগ করা হয়। বিশ শতকের শেষের দিকে এই পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রচুর জনপ্রিয় আকার ধারন করে এবং বর্তমানে নরমাল ডেলিভারি হয় না বললেই চলে!সাম্প্রতিক গবেষনায় এই হার অত্যন্ত বিপদজনক আকার ধারন করছে।সিজার ডেলিভারির ক্ষেত্রে মূলত দুইটি মূল কারন বিবেচিত ছিলঃ

১)যখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়(মা অথবা বাচ্চার শারীরিক যেকোন ত্রুটি)
২)নরমাল সম্ভব কিন্তু তা মা অথবা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ



তবে বর্তমানে অনেকটা ফ্যাশনের মত আকার ধারন করেছে এই সিজারিয়ান ডেলিভারি।সিজার ও নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে অনুজীব বিজ্ঞান। নরমাল ও সিজার ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনুজীবের ভুমিকা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

আমাদের শরীরে থাকা প্রায় ট্রিলিয়ন সংখ্যক অনুজীব আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।মায়ের শরীর থেকে এই অনুজীব বাচ্চার শরীরের প্রবেশ করে।এইসব অনুজীব বাচ্চার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।যখন একজন মা সিদ্ধান্ত নেন তিনি স্বাভাবিক উপায়ে বাচ্চা জন্মদান না করে সিজার পদ্ধতিতে জন্মদান করবেন তখন তাদের ডাক্তার কর্তৃক বিভিন্ন ঔষধ প্রয়োগ করা হয় যা অমরার মাধ্যমে বাচ্চা ও মায়ের যে সম্পর্ক তা বাধাগ্রস্থ করে এবং বিভিন্ন অনুজীবের যাতায়াত বন্ধ করে।মায়ের শরীরে প্রয়োগকৃত বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় ফলে বাচ্চার  শরীরে ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে।



স্বাভাবিক জন্মদানের ক্ষেত্রে শিশুর শরীরে মায়ের জরায়ু থেকে প্রচুর পরিমানে অনুজীব শিশুর শরীরে প্রবেশ করে ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একজন সিজারিয়ান শিশু থেকে কয়েকগুন বেশি থাকে।


'The Old Friends' হাইপোথিসিসের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে আসা ডেনড্রাইটিক সেলের ভূমিকা চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলঃ



স্বাভাবিক জন্মদানের ফলে শিশু মায়ের দেহ থেকেই রোগ প্রতিরোধকারী ডেনড্রাইটিক সেল,বিভিন্ন ধরনের এন্টিজেন পেয়ে থাকে যা পরবর্তীতে তার দেহকে বিভিন্ন অনুজীব এর আক্রমন থেকে দূরে রাখে এবং সুস্থ রাখে।মায়ের শরীরে পূর্বে তৈরী হওয়া বি সেল থেকে  এন্টিবডি ও মেমোরি সেল শিশুর শরীরে প্রবেশ করে দেহের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে।

মায়ের শরীর থেকে আসা বিভিন্ন জীবানু শিশুর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।'ল্যাকটোব্যাসিলাস' শিশুর শরীরে মায়ের জরায়ু এবং মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং শিশুর অন্ত্রে প্রবেশ করে শিশুর দেহকে সুস্থ রাখতে ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও 'E coli' ও শিশুর অন্ত্রে থেকে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।স্বাভাবিক ভাবে জন্মদানের ফলে শিশুর শরীরে বিভিন্ন জীবানু প্রবেশ করে এবং তার দেহের বাইরের অংশে অন্য ক্ষতিকর জীবানু যাতে বাসা না বাধতে পারে সেজন্য কাজ করে।কিন্তু একটি গবেষনায় দেখা গেছে সিজারিয়ান শিশুদের শরীরে এই উপকারি জীবানুগুলো না থাকায় তারা সহজেই হাসপাতালের পরিবেশ থেকে বিভিন্ন জীবানু যাদের আমরা সুযোগসন্ধানী অনুজীব বলে থাকি তারা আক্রমন করে এবং শিশু রোগাক্রান্ত হয়। 'Staphylococcus' এবং 'Acinetobacter'    শিশুর শরীরের উপর বাসা বাধে এবং বিভিন্ন স্কিন ডিজেজের কারন হয়ে থাকে। বর্তমানে শিশুদের ক্ষেত্রে এই স্কিন ডিজেজ খুবই মারাত্মক আকার ধারন করেছে।

তবে স্বাভাবিক জন্মদানের ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা আছে।আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে স্বাভাবিক জন্মদান এসেপটিক উপায়ে হয় না বলে শিশু বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।Streptococcus,HSV,Clamydia এবং Gonorrhea দ্বারা অনেক শিশুই স্বাভাবিক জন্মদানের পরে আক্রান্ত হয়।অসাবধানতা ও হাসপাতালগুলোতে অসচেতনতা এক্ষেত্রে প্রধান কারন হিসেবে বিবেচিত হয়।

শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জন্মদান যে গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে আপনার আশেপাশের মানুষগুলোকেও জানান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।


লেখকঃ
Maksudur Rahman Shihab
Department Of Microbiology,Jagannath University


রেফারেন্সঃ
1.https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3110651/
2.https://www.nytimes.com/2018/02/05/well/live/infant-microbiome-cesarean-childbirth-breastfeeding.html
3.https://blogs.scientificamerican.com/guest-blog/shortchanging-a-babys-microbiome/


No comments

Powered by Blogger.